আসাদুজ্জামান সম্রাট: ‘লাভজনক পদ’ কোনটি বা কেনো এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছিল ১৯৭২ সালে। এর পর ১৯৯৬ সালে আদালত গড়িয়ে আবার তা সামনে আসে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। এবার দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ নিয়ে আবারও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

১৯৭২ সালের সংবিধানে সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের যোগ্যতার প্রশ্নে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের পদ লাভজনক নয় বলে গণ্য করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ সালে সংবিধানে যে পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়, তাতে ওই বিধানে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পদকেও অলাভজনক গণ্য করার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।

এরপর ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করা হলে সে সময়েও এ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। তখন হাইকোর্টে এক রিট মামলায় বলা হয়েছিল যে, প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নিয়ে রাষ্ট্রের কোন লাভজনক পদে নির্বাচিত হওয়া যায় না। তবে সেই রিট শুনানি শেষে একটি বেঞ্চ রাষ্ট্রপতির পদ লাভজনক নয় বলে রায় দিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের আইনজীবী (পিপি) অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত দু’জন কর্মকর্তা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনলে আবারও লাভজনক পদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। 

বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাভজনক পদে থেকে অংশ নেয়া যায় না। সরকারি কর্মকর্তাদের পদ প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদ তা স্পষ্ট। আরপিওতে বলা আছে, সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পার না হলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সে সময়ে এই সময় বাড়িয়ে ৫ বছর করার প্রস্তাব করা হলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

সংবিধানের ৬৬ (চ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে তিনি নির্বাচনের অযোগ্য হবেন। আর এই অনুচ্ছেদেই আবার বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপ-মন্ত্রী প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত বলে গণ্য হবেন না। সংসদ সদস্যদের পদ লাভজনক কিনা তা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও সংবিধানে এ ব্যাপারে কিছু বলা নেই। সংসদ সদস্যরা যেহেতু বেতন নেন না, তারা ‘সম্মানী’ নেন তাই তাদের পদও লাভনক নয় বলে সিদ্ধান্ত আছে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (আরপিও)-এর ১২ ধারায় বলা আছে, সেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ বা সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা ৫০ শতাংশের বেশি সরকারি শেয়ারসম্বলিত কোম্পানির চাকরি বা পদ লাভজনক। সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে সরকারি কর্মচারীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মে বেতনাদিযুক্ত পদে অধিষ্ঠিত বা কর্মরত ব্যক্তি সরকারী কর্মচারী। প্রজাতন্ত্রের কর্ম মানে হলো: বাংলাদেশ সরকারের সামরিক বা বেসামরিক প্রকৃতির কোনো কর্ম, চাকুরি বা পদ, কিংবা আইনের দ্বারা প্রজাতন্ত্রের কর্ম হিসেবে ঘোষিত হতে পারে এরূপ অন্য কোনো কর্ম।

দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্মাবসানের পর কোন কমিশনার প্রজাতন্ত্রের কার্যে কোন লাভজনক পদে নিয়োগ লাভের যোগ্য হইবেন না।’ মো. সাহাবুদ্দিনের রাষ্ট্রপতি হওয়ার মাধ্যমে কি আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে. এই বলে বিতর্ক তোলা হয়েছে। 

জাতীয় সংসদের আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার বলেন, সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের (২)(চ) এবং (৩) অনুসারে রাষ্ট্রপতি পদ কোনভাবেই লাভজনক পদ নয়। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকার পরেও লাভজনক পদ নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেয়ার বিষয়টি একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।  তিনি বলেন, একটি মহল পরিকল্পিতভাবে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করে রাষ্ট্রপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে বিতর্কিত করতে চাইছে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব